আজকের দিনে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বর্বর হামলা চালায় ছাত্রলীগ

রাজাকারদের কোনো দাবি মানা তো হবেই না বরং তাদের প্রতিহত করা হবে- গত বছরের ১৫ জুলাই এমন হুঁশিয়ারি দেন তৎকালীন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজাকার স্লোগানের জবাব দেবে ছাত্রলীগ। আর ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম বলেন, যারা রাজাকার স্লোগান দিচ্ছে তাদের শেষ দেখে নেয়া হবে। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলে ছাত্রলীগের বর্বর হামলা। আহত হন চার শতাধিক শিক্ষার্থী।

গত বছরের মধ্য জুলাইতে এসে কোটা আন্দোলনে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৪ জুলাই রাতের ঘটনার পর শিক্ষর্থীদের উদ্দেশে একের পর এক হুমকি দিতে থাকেন সরকার ও আওয়ামী লীগের কর্তাব্যক্তিরা।

মন্ত্রীদের দেয়া এসব হুমকি বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যায় ১৫ জুলাই দুপুরের পর থেকেই। হল থেকে বের হতে শিক্ষার্থীদেরকে বাঁধা দিতে থাকে ছাত্রলীগ। এক পর্যায়ে বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে শুরু হয় সংঘর্ষ। ভিসি চত্বর, মল চত্বর, ফুলার রোড, নীলক্ষেত সড়ক, টিএসসি, কলাভবন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তারা শিক্ষার্থীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করেন। আন্দোলনকারীদের খুঁজে খুঁজে পেটান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি বিভিন্ন হলের কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের খুঁজতে থাকেন তারা।

এদিন বহিরাগত এনে গোটা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলা চালান ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিল হকিস্টিক, লাঠি, রড, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায় বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারীকে।

হামলা হয় ইডেন মহিলা কলেজে ও ঢাবির ছাত্রী হলেও। আহত হন চার শতাধিক শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ছিলেন অসংখ্য নারী শিক্ষার্থী। ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রীদের হামলায় আহত হন অন্তত ১০ ছাত্রী।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও ছাড় দেয়নি ছাত্রলীগ-যুবলীগের অস্ত্রধারীরা। জরুরি বিভাগের সামনে আহত ও তাদের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপরও করা হয় হামলা। সন্ধ্যার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরেও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি হামলার ঘটনা ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাত ৯টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

এই হামলার প্রতিবাদে পরদিন সারা দেশে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগও।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটি।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *