ইউক্রেনে ২৫ জনকে হত্যা, তবুও বলছে শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাশিয়া

ক্রেমলিন মঙ্গলবার বলেছে, তারা ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় — এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়ার হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী এক গর্ভবতী নারী এবং ডজনখানেক বন্দিও রয়েছেন।

বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ হামলাগুলো ঘটে মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোকে ইউক্রেনে চলমান চতুর্থ বছরের যুদ্ধ বন্ধে নতুন সময়সীমা দেন — না হলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, রাশিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের একটি কারাগারে হামলা চালিয়েছে — যে অঞ্চলকে রাশিয়া নিজেদের দাবি করে — এতে ১৬ জন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “এটি ছিল একটি ইচ্ছাকৃত হামলা, দুর্ঘটনাবশত নয়। রুশ বাহিনী জানত তারা একটি বেসামরিক কারাগারে হামলা করছে।”

ক্রেমলিন এই দাবি অস্বীকার করেছে।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “রুশ সেনাবাহিনী বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় না।”

তিনি আরও বলেন, মস্কো ট্রাম্পের সময়সীমা “নজরে রেখেছে” এবং সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষা করব।”


‘যুদ্ধাপরাধ’

ইউক্রেনের আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার বাহিনী কারাগারে চারটি ‘গ্লাইড বোম্ব’ নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ জানায়, এতে ১৬ বন্দি নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ভবনগুলোর জানালা উড়ে গেছে এবং চারপাশে ইট-পাথর ছড়িয়ে রয়েছে।

তবে কারাগারের সীমানা নিরাপদ আছে এবং কোনো বন্দি পালানোর আশঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।

জরুরি বিভাগ কর্মীরা ধ্বংসস্তূপে জীবিতদের খোঁজ করছে — এমন ছবি প্রকাশ করেছে অঞ্চলটির জরুরি বিভাগ।

একজন সিনিয়র ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, বিলেনকিভস্কা কারাগারে ২৭৪ জন বন্দি ছিল এবং সেখানে ৩০ জন কর্মী কাজ করছিলেন।

তিনি আরও জানান, সেখানে কোনো রুশ যুদ্ধবন্দি রাখা হয়নি।

ইউক্রেনের মানবাধিকার সংরক্ষণ কমিশনার দিমিত্রো লুবিনেটস বলেন, জাপোরিঝিয়ার এই হামলা রাশিয়ার আরেকটি যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ।

তিনি বলেন, “বন্দি ব্যক্তিরাও জীবনের অধিকার এবং সুরক্ষার অধিকার হারায় না।”


হাসপাতালে হামলা

‘গ্লাইড বোম্ব’ হামলার বাইরে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া রাতভর ৩৭টি ড্রোন এবং ২টি মিসাইল ছুড়েছে, যার মধ্যে ৩২টি ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে।

জেলেনস্কি জানান, অন্য একটি হামলায় রুশ বাহিনী দ্নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের কামিয়ানস্কে শহরের একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, “এই হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ছিল। তার নাম ছিল ডায়ানা। তার বয়স মাত্র ২৩ বছর।”

পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলে পৃথক হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির ভারপ্রাপ্ত গভর্নর।


ফ্রন্টলাইনে অগ্রগতি দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেন এখন রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। রাশিয়া নতুনভাবে এমন এলাকায় প্রবেশ করছে, যেগুলো আগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, তারা ফ্রন্টলাইনের দুটি গ্রাম দখলে নিয়েছে — একটি দোনেৎস্ক অঞ্চলে, অন্যটি জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে।

মঙ্গলবারের কারাগারে হামলাটি সেই ঘটনার তৃতীয় বার্ষিকীতে ঘটেছে, যেখানে ইউক্রেন দাবি করে, রাশিয়া দখলকৃত ডোনেৎস্ক অঞ্চলে একটি কারাগারে হামলা চালিয়ে বহু ইউক্রেনীয় বন্দিকে হত্যা করেছিল।

তখন ইউক্রেন ও রাশিয়া একে অপরকে দোষারোপ করেছিল ২৯ জুলাই রাতে ওলেনিভকা বন্দিশিবিরে হামলার জন্য, যেখানে মারিউপোল শহরের দীর্ঘ অবরোধের পর আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেনীয় সৈন্যদের রাখা হয়েছিল।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *