গত এক সপ্তাহের প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় উত্তর চীনে অন্তত ৬০ জনের মৃ’ত্যু হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিংয়ে ঘটে যাওয়া অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নিহতদের মধ্যে ৩১ জনই রাজধানীর পাহাড়ি মিয়ুন (Miyun) জেলার একটি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা।
বেইজিংয়ের উপ-মেয়র শিয়া লিনমাও (Xia Linmao) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শুধুমাত্র রাজধানী শহরেই ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নয়জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, খবর দিয়েছে রয়টার্স।
প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছিল এক সপ্তাহ আগে এবং সোমবার তা চরমে পৌঁছে। এতে বেইজিং ও আশপাশের প্রদেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মিয়ুন জেলায় সর্বোচ্চ ৫৭৩.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্থানীয় গণমাধ্যম “অত্যন্ত বিধ্বংসী” বলে অভিহিত করেছে। এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত প্রায় সমান বেইজিংয়ের পুরো বছরের গড় বৃষ্টিপাতের (৬০০ মিমি) সঙ্গে।
পার্শ্ববর্তী হ্য়বেই (Hebei) প্রদেশে প্রবল বৃষ্টির কারণে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বেইজিংয়ের নিকটবর্তী চেংদে (Chengde) শহরে কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৮ জন নিখোঁজ। এই মৃতরা মূলত মিয়ুন জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের জিংলং (Xinglong) এলাকার গ্রামগুলোতে ছিলেন, যেগুলো মিয়ুন জলাধার সংলগ্ন — যা উত্তর চীনের সবচেয়ে বড় জলাধার।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া (Xinhua) বুধবার রাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে এসব মৃত্যুর খবর দিলেও নির্দিষ্ট সময় ও কারণ উল্লেখ করেনি।
প্রবল বর্ষণের ফলে মিয়ুন জলাধার তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ জলস্তর ও ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে।
শুধু রবিবার একদিনেই প্রতি সেকেন্ডে ৬,৫৫০ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়েছে, যা প্রায় ২.৫টি অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুলের সমান।
এদিকে, হ্য়বেই প্রদেশের জলাধারের উত্তরের একটি গ্রামে সোমবার ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হয়, যাতে ৮ জনের মৃত্যু এবং ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই ধরণের চরম আবহাওয়া ও ভয়াবহ বন্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে।
এই দুর্যোগ চীনা নীতিনির্ধারকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অনেক কর্মকর্তা বলছেন, এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের কারখানা উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।