গড়ার নামে ধ্বংস করছেন ট্রাম্প

মার্কিন নোবেলজয়ী পার্ল এস বাক নোবেল জয়প্রত্যাশী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি দারুণ প্রবাদ রেখে গেছেন। কিন্তু তিনি তা সম্পর্কে অবগত নন বলে মনে হয়, যদিও তাঁর জীবন কল্পকাহিনির আধিক্য দিয়ে তৈরি। পার্ল তাঁর মনোমুগ্ধকর ‘দ্য লিভিং রিড: আ নভেল অব কোরিয়া’ নামে ঐতিহাসিক উপন্যাসে লিখেছেন, ‘ধ্বংস করা সহজ কিন্তু তৈরি করা কঠিন। এটা বিশেষভাবে মনে রাখবেন, যখন আপনি কিছু ধ্বংস করতে চান।’

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপটি এ মিথ্যা ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল যে, সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থানে ছিল না। আর তাই বিশ শতকের মধ্যভাগে তথা ‘আমেরিকান শতাব্দী’তে মার্কিন বৈশ্বিক আধিপত্য কায়েমে ‘পারমাণবিক শ্রেষ্ঠত্ব’ প্রতিষ্ঠার অধরা আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় এসেছে। ২০১৮ সালে যখন তিনি আইএনএফ চুক্তি ত্যাগ করেন, তখন ট্রাম্প কেবল মার্কিন ডিপ স্টেট দ্বারা নির্ধারিত কৌশলগত হিসাব অনুসারে তাঁর পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছিলেন।

আজ মোদি সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প কী করছেন, সে সম্পর্কে ভারতীয়দের আলোচনা একটি বৃহৎ চিত্রের অংশ হিসেবে দেখা উচিত। বিপরীতে একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এই দৃষ্টান্তটি কেবল ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো’র একটি উদাহরণ হিসেবে আলোচনা করেছিলেন। আমরা কি কুয়ো থেকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দ করছি না এবং এমনকি আমাদের বাম হাত জানে না যে, ডান হাত কী করছে।

আনন্দের সংবাদ হলো, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চলমান মার্কিন নেতৃত্বাধীন ট্যালিসম্যান সাবের ২০২৫ বহুপক্ষীয় মহড়ায় ভারতের প্রথম অংশগ্রহণ সম্পর্কে ভারতের কৌশলবিদ সম্প্রদায় অবগত নয়। অন্য কথায়, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণ কৌশলের একটি ক্ষুদ্র নমুনা মাত্র– যদিও এটি একটি পরিণতিমূলক কৌশল, সে বিষয়টি তারা জানে না।

৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, মস্কো আর স্থল থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য মধ্যমপাল্লা ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর তার স্ব-আরোপিত স্থগিতাদেশ মেনে চলবে না। কারণ ওয়াশিংটন কেবল অনুরূপ স্থগিতাদেশের প্রতিদান দিতেই অস্বীকৃতি জানায় না, বরং এ ধরনের অস্ত্রের সামনের দিকে মোতায়েন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করছে। মস্কোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দিল্লিতে খুব একটা মনোযোগ পায়নি, যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব মূলত ইউরেশিয়ার বিকাশ থেকে উদ্ভূত। তাহলে ভারতের লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে কৌশলগত দৃষ্টান্ত কীভাবে প্রকাশিত হয়? সহজ কথায়, ট্রাম্প প্রায় প্রতিদিন মোদিকে তিরস্কার করছেন। যেমন– এক. তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শান্তির মধ্যস্থতা করছেন; দুই. রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কিনে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় ভারত অবদান রাখছে; তিন. ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন না করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করবে; চার. ভারতকে আমেরিকান পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ বাজার উন্মুক্ত করতে হবে অথবা আমেরিকান বাজারে তার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত এক মাস ধরে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শক্তিশালী উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। ভারতে তাদের যুদ্ধ বিমানের জন্য জিই অ্যারোস্পেসের এফ৪১৪ জেট ইঞ্জিনের যৌথ উৎপাদন শুরু করছে। ভারত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে তিন সপ্তাহব্যাপী একটি বিশাল সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে উন্নত আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রের স্থায়ী মোতায়েনের সুবিধার্থে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত।

২০২৫ সালের ট্যালিসম্যান সাবের মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে চারটি কোয়াড দেশ এখন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকৌশল বিষয়ে একমত। কোয়াড একটি সামরিক জোটে রূপান্তরিত হচ্ছে। কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের আগমনের পর তাকে উল্লাসপূর্ণ স্বাগত জানানোর জন্য মোদি সরকার ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *