গাজা উপত্যকায় প্রায় সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং খাদ্যসংকট চরমে। প্রায় ৯০% মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে — কেউ কেউ বারবার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সংস্থা OCHA জানায়, ৮৭.৮% গাজা এলাকা এখন ইসরায়েলি সামরিক নিষেধাজ্ঞা বা সরাসরি নির্গমনের আওতায় পড়েছে। এর মানে, গাজার মাত্র ১২% এলাকায় এখন দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ২৮টি দেশ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে কতজন মারা গেছেন?
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ৫৮,৩৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন (১৫ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত), যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এই সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা হামাস পরিচালিত। যদিও এটি “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে বিবেচিত, তথাপি জাতিসংঘ ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে।
তৃতীয় পক্ষের গবেষণায় আসল মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগাট এর নেতৃত্বে এক গবেষণা বলছে, জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৮০,০০০ ছাড়িয়েছে।
Lancet-এর এক গবেষণায়ও দেখা গেছে, গাজার মৃত্যুর সংখ্যা অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শোকবার্তা এবং সরকারপ্রদত্ত তালিকার তুলনা করা হয়।
গাজায় কত মানুষ অনাহারে ভুগছে?
যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পর গাজায় খাদ্য, পানি ও জ্বালানির প্রবেশ প্রায় বন্ধ। বেকারিগুলো বন্ধ, কমিউনিটি কিচেনগুলোতে নেই খাদ্যসামগ্রী।
- ৩ জনে ১ জন দিনে দিনে না খেয়ে থাকছে, জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (WFP)।
- IPC রিপোর্ট (মে ২০২৫) অনুযায়ী, গাজার সম্পূর্ণ জনসংখ্যা এখন “তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা” (Level 3) অবস্থায় আছে।
- ৪.৭ লাখ মানুষ রয়েছে “চরম ক্ষুধা” (IPC Level 5) ঝুঁকিতে।
এটি “ক্ষুধাজনিত জীবন হুমকি” হিসেবে চিহ্নিত।
UNICEF বলছে, ৭১,০০০ শিশু ও ১৭,০০০ মা আগামী মাসগুলোতে চরম অপুষ্টিজনিত চিকিৎসা প্রয়োজন করবে।
Doctors Without Borders জানায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে “তীব্র অপুষ্টি” রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিদিন মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, বেশিরভাগই শিশু। ২৩ জুলাই ১৫ জন অনাহারে মারা গেছে।
চিকিৎসা কোথায় সম্ভব?
Doctors Without Borders জানায়, কোনো হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু নেই। বিদ্যুৎ ও পানি ছাড়া কাজ করছে অল্প কয়েকটি হাসপাতাল।
WHO জানায়, ৩৬টির মধ্যে ১৮টি হাসপাতাল আংশিক সচল।
প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, আউটডোর ক্লিনিক ও এনজিও সেবার মাত্র ৪০% কার্যকর।
মাত্র ২টি ফিল্ড হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে চালু রয়েছে।
গাজায় এখন কী পরিমাণ সাহায্য পৌঁছাচ্ছে?
১১ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল।
ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ভয়াবহভাবে সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
Gaza Humanitarian Foundation (GHF), ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংস্থা, মে মাসের শেষ থেকে সীমিতভাবে খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে।
WFP জানায়, মে ২১ থেকে প্রতিদিন ২০–৩০ ট্রাক খাদ্য গাজায় পৌঁছাচ্ছে — যা মোট চাহিদার ছোট অংশ মাত্র।
সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় ৬০০–৭০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।