গোপালগঞ্জের ঘটনায় গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় গণগ্রেপ্তারের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “দুষ্কৃতিকারীরা ছাড়া কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। এ ঘটনায় শুধুমাত্র দোষীদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।”

রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, কোনো অবস্থাতেই দুষ্কৃতিকারীরা যেন ছাড়া না পায় এবং নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। গোপালগঞ্জের ঘটনায় গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না, শুধুমাত্র যারা অন্যায় করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যেভাবে পরিস্থিতি, সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে যাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে অহেতুক কাউকে হয়রানি না করা হয়।

দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “ঢাকায় পুলিশের সব ডিসি, র‌্যাব কর্মকর্তারা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ডেকে আমরা অবস্থা পর্যালোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, তাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে।”

গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্ত নিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনাটি অস্বীকার করছি না। রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটে। আমরাও একসময় রাজনীতি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আরও অনেক কিছু ঘটে। তবে মূল বিষয় হলো—ঘটনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা। আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। মামলা হবে কি না, কীভাবে হবে—সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপনারা নিজ চোখে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি দেখেছেন।”

আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “হরতাল হয়েছে কি না, সেটা আপনারাই দেখেছেন। দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম। এটাই প্রমাণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি এবং কার্যকারিতা রয়েছে।”

গোপালগঞ্জের ঘটনাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এই বাহিনী দিয়েই নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব। প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে কোনো অসুবিধা হবে না।”

তিনি বলেন, “আপনারা যেভাবে প্রশ্ন করছেন, মতামত দিচ্ছেন—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমি শুধু অনুরোধ করব, যেন কোনো অশালীন বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার না হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও তা যেন শালীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, সরকার গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে সজাগ রয়েছে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনিক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *