গোপালগঞ্জে বুধবারের সহিংসতায় গুলিতে নিহত চারজনের দাফন ও সৎকার ময়নাতদন্ত ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত, এই ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র একটি সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে এই সংঘর্ষের সূচনা হয়।
এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
নিহতরা হলেন—রমজান কাজী, সোহেল রানা, দীপ্ত সাহা এবং ইমন তালুকদার।
নিহতদের পরিবার দাবি করেছে, তাদের সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে।
তাদের কারোরই ময়নাতদন্ত বা ইনকোয়েস্ট (মৃত্যু অনুসন্ধান) করা হয়নি।
ইমনকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই সময়ে সোহেলকে টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রমজানকে বুধবার রাতের এশার নামাজের পর গেটপাড়ায় দাফন করা হয় এবং দীপ্তের সৎকারও একই রাতে পৌর সৎকার কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জিবিতেশ বিশ্বাস এক বাংলা দৈনিককে জানান, নিহতদের মরদেহ হাসপাতালে আনা হলেও কোনো ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তিনি আরও জানান, অনেক আহতকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, পুলিশও কোনো ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট করেনি বলে জানা গেছে।
এদিকে, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, হাসপাতাল থেকে কোনো মৃত্যু সনদও দেওয়া হয়নি।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক স্বীকার করেছেন যে ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তিনি জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনের বেশিকে আটক করা হয়েছে।
কেন ময়নাতদন্ত করা হয়নি, এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় আনা হবে এবং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক পুলিশ রিপোর্টে বলা হয়েছে, “একটি বিক্ষুব্ধ জনতা জোরপূর্বক জেলা হাসপাতাল থেকে নিহত চারজনের মরদেহ নিয়ে যায়, ফলে ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি।”
তবে নিহতদের পরিবার ভিন্ন তথ্য দিয়েছে।
রমজানের চাচা কালিম মুন্সী দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, “আমি একটি ভিডিওতে দেখেছি আমার ভাতিজাকে গুলি করা হয়েছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। আমরা মরদেহ থানায় নিয়ে যেতে চাইলেও দেখি, গেট বন্ধ। পরে মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য হাসপাতালে ফেরত নিয়ে যাই, কিন্তু হাসপাতাল থেকে বলা হয়, ‘এখন নিয়ে যান, এখানে সমস্যা হতে পারে।’ তাই আমরা পোস্টমর্টেম করাতে পারিনি।”
সোহেলের চাচা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “বুধবার বিকেলে ফোনে জানতে পারি আমার ভাতিজা গুলিতে মারা গেছে। আমি পৌঁছানোর আগেই মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি, হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদও পাইনি।”