‘চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ স্লোগান শুনে মাথা নিচু করেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

চাঁদাবাজির মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ চারজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে আদালতে তোলার সময় তাদের দেখে ‘চাঁদাবাজ’ ‘চাঁদাবাজ’ বলে স্লোগান দেন উপস্থিত লোকজন ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় মাথা নিচু করে রাখেন গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রনেতারা।আসামিদের আদালতে তোলার সময় তেড়ে যেতে দেখা যায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের। এ সময় পুলিশি পাহারা ভেঙে কেউ কেউ তাদের কিল-ঘুসি মারতে উদ্যত হন। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। আদালতে উঠা ও নামার সময় আসামিরা মাথা নিচু ও ভীত অবস্থা দেখা যায়। এ সময় আসামিদের লক্ষ্য করে ‘জুলাই ব্যবসার দিন শেষ, চাঁদামুক্ত বাংলাদেশ’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ” ইত্যাদি স্লোগান দেন৷

রিমান্ড মঞ্জুর শেষে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় আসামিদের আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ফের স্লোগান দিতে থাকেন।

আসামিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত তিনজন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত একজন নেতা রয়েছেন। তারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাব, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। শুনানি শেষে আদালত চার আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন এ চারজন আসামিকে ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত করে বলেন, এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ওদের এত কম বয়স, কেন ওদের এখনই কোটি কোটি টাকা দরকার?

তিনি বলেন, এগুলোর বেশি লোভ। এত লোভ ভালো না।

এর আগে অভিযুক্ত ইব্রাহিমকে তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। আইনজীবীকে তিনি বলেন, আমরা চাঁদা চাইনি। সেখানে আওয়ামী লীগের দোসর আছে, এ কথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন দিই। তারা বলে ফোর্স পাঠাচ্ছে, কিন্তু পাঠায়নি। সিয়াম বলেন, আমরা ওই বাসায় যাইনি। নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন আদালতকে বলেন, এই আসামিরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। এনসিপি নামে নতুন সংগঠন আমাদের ছোটভাইরা করেছে। এদের মধ্যে কিছু লোক চাঁদাবাজি করে সেই চাঁদাবাজির দায় বিএনপির ওপর চাপাচ্ছে। আর এরা বলে- ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ অথচ এরাই বড় চাঁদাবাজ। এদের রিমান্ডে দিলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যহীন স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু এই চাঁদাবাজরা তা নষ্ট করে দিচ্ছে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘এরা ন্যাশনাল চিলড্রেন পার্টি করেছে। আগে এদের খাওয়ার টাকা ছিল না, এখন পাজেরো নিয়ে ঘোরে। এই চাঁদাবাজির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’ এর পর বিচারক আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এর আগে শনিবার রাতে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সংগঠন দুটি থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পাঁচজন যুবক। তিনি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েক দিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসে। গতকাল রাত ৮টার দিকে তারা আবার ওই বাসায় যায় স্বর্ণালংকার আনতে। সে সময় বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় শাম্মি আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৭ জুলাই আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বাদীর গুলশান ২ এর বাসায় হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চাঁদা দাবি করে। অপারগতা প্রকাশ করলে, তাকে আওয়ামী লীগের ও স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেয়। ভয়ে তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। পরে ১৯ জুলাই পুনরায় বাকি ৪০ লাখ টাকা জন্য তারা যান। সেদিনও হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে গত ২৬ জুলাই চাঁদা নিতে আসলে গুলশান থানা পুলিশ তাদের আটক করে। কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যায়।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *