জুলাই প্রকল্পে হরিলুট, ২৫ লাখ টাকার লিফট প্রায় কোটি টাকা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আবাসন সুবিধা দিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ‘৩৬ জুলাই’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু কোনো নিয়ম-কানুন না মেনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। প্রকল্পটির জন্য এক একটি উপাদান কিনতে অতিরিক্ত ব্যয় সর্বনিম্ন আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ গুণ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া এই প্রকল্পের কেনাকাটা যেন সেই বালিশ কাণ্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। 

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রতিটি পদ ও স্তরেই রয়েছে অনিয়ম ও অস্বাভাবিক বাড়তি ব্যয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিগত সরকারের আমলে প্রকল্পের নামে যে ‘হরিলুট’ হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সেই পুরানো প্রেতাত্মা ভর করেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের আবাসন সুবিধা দিতে বিনামূল্যে ৮ শতাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের। 

প্রকল্পের জন্য ৯০০ টাকার আরসিসি পিলারের দাম ধরা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২৫ লাখ টাকার লিফট ৯২ লাখ টাকা, ১২ লাখ টাকার সাবস্টেশন ৬৩ লাখ টাকা, ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্প সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে হয়েছে। 

সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য ১ হাজার কেজি ধারণ ক্ষমতার ১৮টি বেড লিফটের দাম ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার টাকা, যার প্রতিটির দাম গড়ে ৯২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি দাম ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া ১০ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮০০ কেজির ১২টি প্যাসেঞ্জার লিফট ক্রয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিটি লিফটের গড় দাম ৮৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা প্রকৃত দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি। 

প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১০০০ কেভিএ (কিলো ভোল্টঅ্যাম্পিয়ার) ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি সাবস্টেশন ট্রান্সফরমারের দাম ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়বে ৯৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা প্রকৃত দরের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। 

শুধু তাই নয়, ২৫০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি সাবস্টেশনের দাম ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির গড় দাম ৬২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রকৃত ব্যয় থেকে পাঁচ গুণেরও বেশি। এ ছাড়া প্রকল্পে ৪৫ গুণ বেশি ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর এবং পানির পাম্পের দামও ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা, মাস্টারপ্ল্যান ও নকশা প্রণয়ন হয়নি। 

এসব বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মনদিপ ঘরাই, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হারিজুর রহমান, পরিকল্পনা উইংয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হোরায়রা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

 এদিকে, প্রকল্পে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব এবং তাতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর প্রকল্পটি ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। রোববার (২৭ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা মনে করি প্রকল্পটির যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া উচিত। জুলাই যোদ্ধাদের সব প্রকল্প এক জায়গায় এনে সমন্বয় করা উচিত। ভালো পরিকল্পনা দরকার।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *