নারী আসন দ্বিগুণ করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোট চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা জানিয়েছেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দলটির পক্ষ থেকে বর্তমানে সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন সংখ্যা ১০০টিতে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নারী আসনে সংবিধানে বিদ্যমান পদ্ধতিতেই ভোটের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে বিএনপি।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, নারী প্রতিনিধিত্ব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে বিএনপি তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে। এ দুটি ইস্যুতে কমিশনের আলোচনায় বিএনপি গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছে এবং বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নারী ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা মনে করি, এ আসনগুলো নির্বাচিত হোক বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান পদ্ধতিতে। সরাসরি নারী আসনের জন্য নতুন করে ১০০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ বা ডিলিমিটেশন করা বাস্তবভিত্তিক নয়। তাছাড়া প্রস্তাবিত রোটেশন পদ্ধতি ও নতুন সংরক্ষিত আসনের সীমারেখা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে।কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা এখনো আরপিও অনুযায়ী দলের বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে পারিনি। বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজে অধিকাংশ নারী ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে সরাসরি রাজনীতিতে আসতে দ্বিধা অনুভব করেন। তাই আমরা ধাপে ধাপে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই, ওভারনাইট কোনো বিপ্লবী পরিবর্তন নয়। নারীর সরাসরি নির্বাচন একসময় বাস্তবতা হয়ে উঠবে, কিন্তু এখন ধাপে ধাপে এগোনোই যৌক্তিক।সংবিধান অনুসারে বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। সংসদের আসনের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত এ নারী আসনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো তাদের নির্ধারিত আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকে। ফলে এখানে ভোটে নির্বাচিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

দ্বিকক্ষ সংসদ বা আপার হাউজ সংক্রান্ত আলোচনায় বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা আমাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে এরই মধ্যে আপার হাউজ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত করা। সে উদ্দেশে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।

তবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাবকে ‘জেলা পরিষদ বা প্রাদেশিক ব্যবস্থার মত’ উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ ইউনিটারি (এককেন্দ্রিক) সরকার কাঠামো অনুসরণ করে। এ ধরনের আলাদা নির্বাচনের মাধ্যমে ৭৬ সদস্যের উচ্চকক্ষ তৈরি করা উপযুক্ত বা প্রয়োজনীয় নয়।সালাহউদ্দিন জানান, উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি মোটামুটি ঐকমত্য আছে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হওয়া যায়নি। কেউ বলছে নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে প্রতিনিধি আসবে, কেউ বলছে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হতে হবে। কমিশন এখন এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করবে।

এদিন বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে কমিশনের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগও উত্থাপিত হয়। তারা দাবি করে, উচ্চকক্ষ নিয়ে যে ঐকমত্যের কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, এটা তাদের অভিযোগ। তারা নিজেরাই ব্যাখ্যা দিতে পারবে। আমরা কোনো অভিযোগ করিনি, তাই আমাদের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।২০০১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরাসরি নারী নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও এখন কেন তা সম্ভব নয় —এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাহউদ্দিন বলেন, সেই সময় আমরা ভেবেছিলাম যে ২০০৬ সালের মধ্যে পরিস্থিতি তৈরি হবে।

তবে বাস্তবতা হলো, সমাজ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং তা সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়।তিনি সংক্ষেপে বলেন, সংবিধানের বহু ধারা সময়ের প্রয়োজনে সংশোধিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল ও কমিশন যৌক্তিক, বাস্তবমুখী এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *