মাওলানা শামীম হুসাইন কেরানীগঞ্জ থেকে
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা শুধু ইবাদত-বন্দেগির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলী। ইসলামে উত্তম চরিত্রকে ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীর জন্যই সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নৈতিকতার গুরুত্ব, সততা, আমানতদারি, ওয়াদা রক্ষা, সহিষ্ণুতা ও পরোপকারের মতো গুণাবলীকে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে।
উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।” এই হাদিসটি ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম চরিত্রের গুরুত্বকে তুলে ধরে। উত্তম চরিত্র একজন ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাসকে পূর্ণতা দেয় এবং সমাজে তার সম্মান বৃদ্ধি করে। এটি একজন মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে। রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, “কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কোনো জিনিস হবে না।”
সততা ও সত্যবাদিতা
ইসলামে সততা ও সত্যবাদিতাকে সকল উত্তম চরিত্রের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে সত্যবাদীদের সঙ্গী হতে বলেছেন। সততা কেবল কথা বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল কাজ ও লেনদেনেও এর প্রতিফলন থাকা চাই। একজন সৎ ব্যক্তি সমাজে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিচিত হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সত্যবাদিতার জন্য ‘আল-আমিন’ (বিশ্বাসী) উপাধি পেয়েছিলেন।
আমানতদারি ও ওয়াদা রক্ষা
আমানতদারি ইসলামের একটি অপরিহার্য নৈতিক গুণ। এর অর্থ হলো, কোনো ব্যক্তি আপনার কাছে কোনো কিছু গচ্ছিত রাখলে তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং সময় মতো তা ফিরিয়ে দেওয়া। এই আমানত শুধু বস্তুগত জিনিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোপন কথা, দায়িত্ব ও বিশ্বাসও এর অন্তর্ভুক্ত। একই সাথে, ওয়াদা রক্ষা করাও একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি: যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে; আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন খিয়ানত করে।”
সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য
ইসলামে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতাকে অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” ধৈর্য শুধু কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং বিপদের সময় অস্থির না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা। এই গুণ একজন ব্যক্তিকে মানসিক শক্তি জোগায় এবং যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষম করে।
পরোপকার ও সহানুভূতি
ইসলামে পরোপকার ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।” একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো তার প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ক্ষুধার্তকে খাবার দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া এবং অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করা—এগুলো সবই পরোপকারের অংশ। এই গুণ সমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
ইসলামে নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলী মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলো শুধু পার্থিব জীবনের সাফল্যই নয়, বরং পরকালীন মুক্তিরও পথ। একজন মুসলিমের চরিত্র তার ধর্মের প্রতিফলন। উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে এবং একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে নিজেদের মধ্যে এই গুণাবলীগুলো ধারণ করা।