ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, “আমাদের চূড়ান্ত দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন করা। এই ঘোষণা আমাদের নির্বাচনী রূপান্তরের সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বে নিয়ে গেছে। এখন আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবো।”

মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন যে, দেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগেই অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ঘোষণাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে।

এর আগে জুন মাসে লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন নিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। যদিও প্রধান উপদেষ্টা এর আগে ২০২৬ সালের এপ্রিলেও নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন।

বিএনপি, এবি পার্টি ও অন্যান্যদের ইতিবাচক সাড়া

গুলশানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন—জুলাই ঘোষণা ও আনুষ্ঠানিক নির্বাচন ঘোষণা। আমরা দুটোই স্বাগত জানাই। আমরা আগেই যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সে অনুযায়ী আমরা জুলাই ঘোষণার ধারাগুলোকে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, “নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট ঘোষণা আমরা স্বাগত জানাই। এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া। আমার বিশ্বাস, ডিসেম্বরের আগে তারিখ নির্ধারণ হবে না।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই ঘোষণা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার জন্য প্রয়োজন ছিল। প্রধান উপদেষ্টা এখন কথা বলায় নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত হবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাস দূর হবে এবং সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের মানসিক দূরত্বও কমবে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “রমজানের আগে নির্বাচন ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এই নির্বাচন অবশ্যই জুলাই ঘোষণার ভিত্তিতে হতে হবে, যেখানে ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত থাকবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) তার কথা রাখছেন।”

ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আওয়াল বলেন, “দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রধান উপদেষ্টার আজকের ঘোষণা ইতিবাচক। এটা নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করবে এবং দলগুলোকে প্রস্তুতির সুযোগ দেবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জাতি এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবে। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব হবে নিশ্চিত করা যে জনগণ অবাধে ভোট দিতে পারে, যা অতীতে অনেক সময় সম্ভব হয়নি।”

সিপিবি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানায়

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “এটি একটি অগ্রগতি হলেও, আমরা এখনো বিশ্বাস করি ডিসেম্বরেই নির্বাচন করা সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টা যদি এটি নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতেন, তাহলে ভালো হতো।”

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে, জনগণ জানতে চায় কবে এমন একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে।”

জামায়াত ও জাসদের প্রতিক্রিয়া

জামায়াতে ইসলামী’র নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দলটি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ও জুলাই ঘোষণা নিয়ে বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। জামায়াত আমির ড. শফিকুর রহমান একটি বিবৃতি দেবেন।

তিনি বলেন, “আমি আজ রাতে মন্তব্য করতে পারছি না।”

জাসদের অফিস সচিব সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত — আমাদের দলীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের বিষয়ে কিছু ভাববো না। এখনো নির্বাচনের উপযুক্ত সময় আসেনি।”

ঘোষণার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “আমরা অনুমান করেছিলাম যে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হতে পারে, কারণ প্রধান উপদেষ্টা আগেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে অনেক দলই ক্ষুব্ধ যে একমাত্র একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, অন্যদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।”

এনডিএমের আনন্দ র‍্যালির ঘোষণা

ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) বুধবার বিকেল ৩টায় একটি আনন্দ র‍্যালি বের করবে। মালিবাগে দলীয় মেট্রোপলিটন অফিস থেকে শুরু হয়ে র‍্যালিটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হবে।

দলের অফিস সচিব জাবেদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *