বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত ও অন্যান্য দলের গোপালগঞ্জে হামলার নিন্দা, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ও মিছিলে হামলার নিন্দা, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন প্রধান রাজনৈতিক দল গোপালগঞ্জে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)–র সমাবেশ ও মিছিলে ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর’ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে দলগুলো সরকারকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

ফখরুলের বিবৃতি: “আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে”

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনের পতনের পরও কিছু দুষ্টচক্র আবারও পরিস্থিতিকে পুঁজি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “এনসিপির ঘোষিত ‘গোপালগঞ্জ অভিমুখে পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে যেভাবে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে—যেখানে ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনও ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলা হয়েছে—তা দেশের আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতির বহিঃপ্রকাশ।”

ফখরুল দাবি করেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী চক্র এই সহিংসতার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ও নিজেদের স্বার্থে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

জামায়াতের দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে জানান, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মীদের উপর ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের’ হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (১৭ জুলাই) দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা স্বৈরাচারের দোসর হয়ে নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এনসিপি নেতাকর্মীদের উপর নৃশংস হামলা চালায়।”

পরওয়ার অভিযোগ করেন, “গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের অফিসের সামনেও হামলা হয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে এনসিপি নেতাদের গাড়িতে হামলা চালানো হয়।”

তিনি দাবি করেন, “অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।”

হেফাজতের বিবৃতি: ‘ফ্যাসিবাদ নির্মূলে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান’

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শায়খ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব শায়খ সাজিদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলা দেশের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।”

তারা বলেন, “এখন সময় এসেছে দেশে ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার।”

তারা গোপালগঞ্জে আহত এনসিপি নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এবি পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রতিবাদ

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মনজু ও সেক্রেটারি জেনারেল আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বারবার এনসিপির ‘গোপালগঞ্জ অভিমুখে পদযাত্রা’ কর্মসূচির উপর হামলা চালিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।”

অন্যদিকে, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদ প্রধান বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী চক্র দিল্লির ভরসায় সাহস দেখাচ্ছে। যারা পুলিশ হত্যার বিচার চায়, তারাই আবার পুলিশের উপর হামলা চালায়।”

তিনি আরও বলেন, “এ দেশ আর খুনি হাসিনার নয়, এখন এ দেশ মুগ্ধ, ওয়াসিম ও আবু সাঈদের। এখন সময় এসেছে গোপালকে দিল্লিতে পাঠিয়ে গোপালগঞ্জকে আবু সাঈদগঞ্জে রূপান্তর করার।”

রংপুরের পায়রা চত্বরে জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্যে তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও ইউএনওদের বারবার সন্ত্রাসী হামলা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জনগণের বিপক্ষে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *