মানুষের সব কাজ হয়তো এআই দখল করতে পারবে না।
আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও আমরা কল্পনা করতে পারিনি যে একটা মেশিন আমাদের সঙ্গে কথা বলবে, ছবি আঁকবে, এমনকি কবিতাও লিখবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এআই প্রতিদিন নতুন নতুন কাজ করে আমাদের চমকে দিচ্ছে। আর এই পরিবর্তনের মাঝে একটা অনেকের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—আমাদের চাকরি কি টিকে থাকবে?
এই ভাবনাটা কিন্তু একেবারে অমূলক নয়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে এই মানুষের অনেক কাজ করে দেবে। তবে তিনি আশার আলোও দেখাচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস, অন্তত তিনটি পেশা এই এআই বিপ্লবের মাঝেও টিকে থাকবে।
১. প্রোগ্রামার: যারা এআই তৈরি করেব্যাপারটা বেশ মজার, তাই না? যারা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই তৈরি করে, তাদের চাকরিটাই সবচেয়ে নিরাপদ। বিল গেটসের ভাষায়, ‘এআই যতই উন্নত হোক, এর পেছনে মানুষের হাত থাকতেই হবে।’
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এআই নিজে অনেক কিছু করতে পারে, এমনকি কোডও লিখতে পারে। কিন্তু একটা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করা, তার ভেতরের ভুল খুঁজে বের করা বা ওটাকে আরও উন্নত করার জন্য মানুষের বুদ্ধি দরকার। সহজভাষায় বললে, এআই তৈরি করতে, চালাতে এবং ঠিকঠাক রাখতে মানুষের সহযোগিতা লাগবেই। তাই যারা কোডিং জানে, তাদের কদর দিন দিন আরও বাড়বে।
২. জ্বালানি বিশেষজ্ঞ: যারা শক্তির জোগান দেয়আমাদের বাড়ি, স্কুল, গাড়ি, কারখানাসহ সবকিছু চলে শক্তিতে। শক্তির জগতটা অসম্ভব জটিল। এই শক্তি আসে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তি থেকে। বিশাল এই জ্বালানি খাত এআইয়ের পক্ষে সামলানো সম্ভব হবে না। কোথায় নতুন তেলের খনি খোঁজা হবে, কীভাবে পরিবেশ বাঁচিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে, কিংবা হঠাৎ কোনো সংকট তৈরি হলে কী করতে হবে—এসব বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ মানুষ দরকার।
বিল গেটস মনে করেন, এআই হয়তো তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু আসল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার থাকবে মানুষের কাঁধেই।এআইয়ের মানুষের মতো আবেগ, ভালোবাসা বা সহানুভূতি নেই।
৩. জীববিজ্ঞানী: যারা জীবনের রহস্য উন্মোচন করেজীববিজ্ঞানের জগতটা এত বিশাল যে এআই এখনো তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। একজন জীববিজ্ঞানী শুধু তথ্য জেনেই বসে থাকেন না, তিনি সেসব তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন, রোগের কারণ খোঁজেন এবং নতুন ওষুধ আবিষ্কার করেন। আর এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা। এই জিনিসটা অন্তত এআইয়ের নেই। এআই সর্বোচ্চ অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু একটা নতুন হাইপোথিসিস তৈরি করা বা গবেষণার নতুন দিক বের করার মতো কাজগুলো মানুষকেই করতে হবে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং জীবন রহস্যের গবেষণায় জীববিজ্ঞানীদের গুরুত্ব কমবে না।
আরও কিছু কথা
তবে এটাই শেষ কথা নয়। শুধু তিনটি পেশার কথা জানিয়েই বিল গেটস শেষ করেননি। বিল গেটস একদিকে যেমন এই তিনটি পেশার কথা বলেছেন, তেমনি একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে। প্রযুক্তির জগতে পরিবর্তন এত দ্রুত হয় যে আজকের হিসাব কাল বদলে যেতে পারে। হয়তো আগামী দশ বছরের মধ্যে এআই এতটাই উন্নত হয়ে যাবে যে বেশিরভাগ কাজেই মানুষের আর প্রয়োজন হবে না।
তাহলে আমাদের উপায় কী?
ভবিষ্যতে কী হবে মানুষের?
ভবিষ্যৎ হয়তো এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, শুধু এআই দিয়ে পৃথিবী চলবে না। মানুষের এমন কিছু গুণ আছে যা এআই কখনোই হুবহু নকল করতে পারবে না। আবেগ বোঝা, সৃজনশীলতা বা নৈতিকতার বিচারের মতো কাজে মানুষ এখনো অনন্য। এমন অনেক কাজ আছে যেখানে মানুষের আবেগ, ভালোবাসা আর সহানুভূতির প্রয়োজন। যেমন, একজন ডাক্তার বা নার্সের সেবা, একজন শিক্ষকের যত্ন বা একজন শিল্পীর আঁকা ছবিতে যে মানবিক ছোঁয়া থাকে, তা কোনো যন্ত্র দিতে পারে না।কিছু কাজের জন্য ভরসা করতে হবে মানুষের ওপর।
শেষ কথা
এআইয়ের যুগে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে—পরিবর্তন আগেও এসেছে। শিল্পবিপ্লব ও ইন্টারনেট বিপ্লবে মানুষ নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এবারও সেই পথেই হাঁটতে হবে। বিল গেটসের পরামর্শ হলো, নতুন দক্ষতা অর্জন করুন, নতুনত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুন। ভবিষ্যতে এআই হয়তো আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহকারী হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সেই ভবিষ্যতের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিকস টাইমস