কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬ সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকেলে মুরাদনগর উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
একই দিন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে উপজেলা ছাত্রদল। মিছিল শেষে উপজেলা সদরের আল্লাহ চত্বরে আসিফ অনুসারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করে। এ সময় সমাবেশস্থলের অদূরে বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থান করছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা।
তখন সমাবেশস্থল লক্ষ্য করে পার্শ্ববর্তী জেলা পরিষদের মার্কেট থেকে বেশ কয়েকটি ইটপাটকেল ছোঁড়ার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর পর শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
এ সময় উভয় পক্ষের কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালাতে দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বপালনকালে ৬ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।
এ সময় উপজেলা সদরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত সাংবাদিকরা হলেন- স্টার নিউজের কুমিল্লা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মারুফ, খোলা কাগজের শাহ ইমরান, বার্তা ২৪ এর মহিন নাসের খান রাফি, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মুন্না, মাহফুজ আনোয়ার সৌরভ ও এসএ টিভির ক্যামরাম্যান মো. বাপ্পি।
উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকরা এ হামলার জন্য স্থানীয় বিএনপিকে দায়ী করেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি। হামলার পর মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে ৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহত বাকিদের স্থানীয় ও কুমিল্লা জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মিছিল নিয়ে আসা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও উপজেলা এনসিপির তত্ত্বাবধায়ক মিনাজুল হক জানান, উপদেষ্টার আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে আমাদের বিক্ষোভ মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ছিল।কিন্তু বিএনপির লোকজন অতর্কিত আমাদের ওপর হামলা চালায়। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়ে আমাদের ধাওয়া দিয়েছে। যার ভিডিও আছে। এ সময় আমাদের প্রায় অর্ধশতাধিক সমর্থক আহত হয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন বলেন, ছাত্রদলের ব্যানারে আমাদের একটি মিছিলের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু এনসিপি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এতে বিএনপির ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। এদের মধ্যে ওমর উল্লাহ নামে যুবদল কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহায়তায় মামলা করার এটি একটি কৌশল।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমিন কাদের খান বলেন, উপজেলা সদরে এনসিপির সমর্থনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলছিল। এ সময় পাশে অবস্থান করা কিছু লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আমরা চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এতে কিছু লোক আহত হয়েছেন। কোন পক্ষ এখনও মামলা করেনি। উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।