বিকেলে বাবার ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইরফান বাবু (১১)। পরিবারের চরম আর্থিক সংকট দূর করতে বের হওয়া শিশুটি আর ফিরে আসেনি মায়ের কোলে। পরদিন সকালে একটি মাঠ থেকে উদ্ধার হয় তার গলাকাটা মরদেহ। সন্তানের সঙ্গে এই নৃসংশতা দেখে আর্তনাদ করে বাবা বলেন, ‘মোর বাবাটারে জবাই করল কেন? মোর কলিজাটাকে মারার কী দরকার আছিল?’
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রংপুরের তারাগঞ্জের সকালেকুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বুড়াপীর মাঠ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহত ইরফান উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বসপাড়া গ্রামের দিনমজুর ও ভ্যানচালক সফিকুল ইসলামের একমাত্র ছেলে। সে বুড়িরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে ইরফান গোসল ও খাওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাবার পুরনো ভ্যান নিয়ে বের হয়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ মেলেনি। রাতভর আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা খুঁজেও তাকে পায়নি। রাতেই মসজিদের মাইক থেকে নিখোঁজ সংবাদ ঘোষণা করা হয়।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর আসে, ঘনিরামপুর বুড়াপীর মাঠের একটি পুকুরপাড়ে এক শিশুর গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
শোকে পাথর ইরফানের বাবা সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোর বাবাটা কারো ক্ষতি করে নাই। তোমরা যদি ভ্যানটাই নিবার চাও, ভ্যানটা নিলেই হয়, মোর বাবাটারে জবাই করল কেন? মোর কলিজাটাকে মারার কী দরকার আছিল? মুই কার কাছে বিচার চাইম?’
ইরফানের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত রায় বলেন, ‘ও ছিল খুবই মেধাবী, ভদ্র আর আন্তরিক ছাত্র। পরিবারে অভাব ছিল, তাই মাঝে মাঝে বাবার ভ্যান নিয়ে বের হতো। এই বয়সে এভাবে তাকে হারানো আমাদের সবাইকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি চাই আমরা।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ‘শিশুটির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত চার দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চারটি চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।