শৈলকূপায় ‘হিটলার’ নামের প্রতারকের নেতৃত্বে ভয়ংকর মানবপাচার চক্র

নাজমুল হোসেন,শৈলকূপা থেকে

বিদেশে স্বপ্নের চাকরি, বাস্তবে বন্দিজীবন

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এক ভয়ংকর মানবপাচার চক্রের সন্ধান মিলেছে। স্থানীয়ভাবে ‘হিটলার’ নামে পরিচিত এক প্রতারক এই চক্রের মূল হোতা। প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বিদেশে চাকরির কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি।

বিশ্বস্ত সূত্র দেখা যায়, এই চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেক তরুণ আজ লিবিয়া, দুবাই কিংবা তুরস্কে অমানবিক জীবন যাপন করছেন। কেউ কারাগারে, কেউ সীমান্তে আটকে, কেউবা নিখোঁজ।

ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় নির্মম বাস্তবতা

সাক্ষাৎকারে এক ভুক্তভোগী জানান—

“৬ লাখ টাকা দিয়ে হিটলারের সঙ্গে চুক্তি করি। এখন আমি লিবিয়ায় বন্দি। খাবার নেই, কাগজপত্র নেই, দিন কাটে আতঙ্কে।”

আরেকজন বলেন—

“আমাকে সৌদি পাঠানোর কথা ছিল, এখন আমি অবৈধভাবে কাজ করছি দুবাইয়ে। পুলিশের ভয়, কাগজ নাই, জীবনটা নষ্ট করে দিল ওরা।”

প্রতারণার কৌশল কী?

‘হিটলার’ নিজেকে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকার যুবকদের বিশ্বাস অর্জন করেন। পরে ভুয়া এজেন্সির মাধ্যমে কাগজপত্র ও ভিসা তৈরি করে বিদেশে পাঠানোর নাম করে আদায় করেন লাখ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশই পাচার হয়ে পড়ে মানববন্ধনে, দালাল চক্রের হাতে কিংবা বন্দিদশায়।

প্রশাসনের নিরবতা ও জনমনে ক্ষোভ

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনেকে বলেন, “এই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জানতেন, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ ছিলেন।”

সাম্প্রতিক নিউজটি প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন দাবি করছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনের আহ্বান

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন “স্বপ্নের ঠিকানা” এর নির্বাহী পরিচালক বলেন—

“হিটলারের মতো প্রতারকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। একইসাথে ভুক্তভোগী তরুণদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হোক।”
এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তদন্ত এবং উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *