ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৫ শীর্ষ নেতা কক্সবাজার সফর করেন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪৩৩ ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে তারা অবতরণ করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন ছড়াতে থাকে।
কেউ কেউ দাবি করেন, ওই শীর্ষ নেতারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বৈঠক করতে গিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আজ তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন— এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
কক্সবাজার সফরে এই পাঁচজনের সঙ্গে ছিলেন সারজিস আলমের স্ত্রীও। আর খালেদ সাইফুল্লাহ তাসনিম জারার স্বামী।
এনসিপি নেতারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (ইএ-৪৩৩) ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর দ্রুত তারা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় তাদের কয়েকজনের মুখমণ্ডল মাস্কে ঢাকা ছিল।
এনসিপি নেতারা বিদেশিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে এসেছেন—এমন দাবি করে হোটেল ঘিরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তারা বলেন, ‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে এনসিপি নেতারা পশ্চিমাদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চান। এজন্য গোপনে বৈঠক করতে এসেছেন। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের জাতীয় অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে এনসিপির শীর্ষনেতাদের কক্সবাজার সফর ভালোভাবে নেয়নি অনেক রাজনৈতিক দল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা হয়।
পরিপ্রেক্ষিতে আজ এনসিপির শীর্ষ এই ৫ নেতাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মূলত দলের হাইকমান্ডকে না জানিয়ে শীর্ষ ৫ নেতা কক্সবাজারে যাওয়ায় এবং এটি নিয়ে গুঞ্জনের ঢালপালা মেলায় তাদের শোকজ করা হয়।
বুধবার (৬ আগস্ট) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দীন সিফাত স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘গতকাল ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’ কাছে পূর্বে অবগত করা হয়নি। ‘
এতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায়, ‘আপনাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নিকট স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাদের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় কর্মরত থাকার সময় হাসিনা সরকারের গুম খুন এবং ভোট কারচুপির বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। এসব নিয়ে প্রাকাশ্যে মন্তব্য করায় তাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতনের আগেই তিনি ঢাকায় তার দায়িত্ব শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। বর্তমানে তিনি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে যুক্ত মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত।