নেপালের কাঠমান্ডুর একটি আদালত ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২১১ এর ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিয়েছে। ঢাকার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে মোট ২.৭৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৩.৫ কোটি টাকা) ১৭টি পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক বিমা চুক্তির আওতায় প্রতিটি পরিবারকে ২০,০০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। তবে আদালতের এই রায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ রায়কে নেপালের আইনি ইতিহাসে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রায় অনুযায়ী, এই মামলায় ইউএস-বাংলার “জঘন্য অবহেলা” প্রমাণিত হয়েছে। যদিও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ, ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার পথে ট্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ফ্লাইটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আগুন ধরে যায়। এতে ৫১ জন নিহত হন।
ক্ষতিপূরণের বিবরণ:
- ৭ জন এমবিবিএস শিক্ষার্থীকে পরিবারপ্রতি $170,382 (প্রায় ২৩.৪ লাখ রুপি) করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
- আরও ৬ জন শিক্ষার্থীর পরিবারকে $179,418 (প্রায় ২৪.৭৩ লাখ রুপি) করে ক্ষতিপূরণ।
- বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হিমালয়া এয়ারলাইন্সের কর্মী প্রসন্ন পাণ্ডের পরিবারকে $107,170।
- নিউরোসার্জন ড. বল কৃষ্ণ থাপার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে $277,548।
- ৬৭ বছর বয়সী নার্স জ্ঞানী কুমারী গুরুংয়ের পরিবার পাবেন $45,301।
- বেঁচে যাওয়া যাত্রী ডা. সামিরা ব্যাঞ্জংকার, যিনি গুরুতর আহত হন, পাবেন $44,290।
সবক্ষেত্রেই পূর্বে প্রদত্ত ২০,০০০ ডলার বিমা পরিমাণের বাইরে এই ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়া ও আইনি দিক:
রায় অনুযায়ী, ইউএস-বাংলার বিমানের পাইলটের মানসিক অবস্থা এবং অপারেশনাল ব্যর্থতা দুর্ঘটনার মূল কারণ। যদিও ICAO-এর রিপোর্ট আইনি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য না হলেও আদালত বর্ধিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।
এই মামলা ও রায় অনুযায়ী, ১৯২৯ সালের ওয়ারশ কনভেনশন ও ১৯৫৫ সালের হেগ প্রোটোকল অনুসারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। এই ঘটনাটি ২০১৮ সালের মার্চে ঘটায়, সেসময় নেপাল ও বাংলাদেশ কেউই ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিয়াল কনভেনশনের সদস্য ছিল না।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া ও আইনজীবীর বক্তব্য:
দীর্ঘ সাত বছরের আইনি লড়াই শেষে নিহতদের পরিবার বলেছে, ক্ষতিপূরণের অঙ্কে তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও বিচার পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আইনজীবী অমৃত খরেল বলেন, “এই রায় শুধুমাত্র বিমা পরিশোধ নয়, বরং প্রকৃত ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদালতের স্বীকৃতি। এটি নেপালের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী রায়।”
তিনি বলেন, “এই রায় শুধু একটি মামলার বিজয় নয়, এটি মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য বড় বিজয়।”