একটি রেলগাড়ি ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। প্রতিটি বগি যেন এক একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি। বগির জানালার পাশে বসে থাকা মানুষগুলো তাদের নিজের মতো করে এই চলমান জীবনের মানে খুঁজে নিচ্ছে।
জানালার পাশে বসে থাকা গামছা কাঁধে এক কৃষক; চোখে ক্লান্তি, তবুও আশার রেখা। সে যাচ্ছে বুধবারের হাটে, ধান বিক্রির টাকায় মেয়ের স্কুলের ফিস দেবে। পাশে বসে থাকা যুবকটি কালো প্যান্টে হালকা গন্ধমাখা শরীরে — সে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে, চাকরি পেলে হয়তো ভাঙা ঘরে নতুন চাল লাগবে।
আরেক জানালার সামনে এক বৃদ্ধা, শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে নিচ্ছেন। ছেলের বাসায় যাচ্ছেন, কতদিন পরে দেখা হবে নাতনির সঙ্গে। সামনের আসনে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি কর্পোরেট অফিসার—ল্যাপটপ খুলে মিটিং-এর স্লাইড বানাচ্ছেন, আশেপাশের কোলাহল থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চান, কিন্তু জানালার বাইরের প্রকৃতির ডাকে তার চোখ মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়।
এক শিশু জানালায় মুখ ঠেকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে—গাছ, নদী, মাঠ, দোকান, মানুষ—সবকিছুই তার কাছে নতুন। হয়তো ওর মনেই প্রশ্ন জাগছে—’এই পৃথিবী এত বড় কেন?’
এই রেলগাড়ি শুধু গন্তব্যে পৌঁছে দেয় না—এই বগিগুলো মানুষের জীবন, স্বপ্ন, হতাশা আর সম্ভাবনার আলোর ছবি। জানালার বাইরে যেমন পথ চলে যায়, ঠিক তেমনই মানুষের জীবনের গল্পগুলোও চলতে থাকে—পাশাপাশি, একই গতিতে, কিন্তু ভিন্ন উদ্দেশ্যে।
মাসুম পারভেজ, কথাশিল্পী