মালয়েশিয়ায় থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার রক্তক্ষয়ী সীমান্ত দ্বন্দ্ব নিয়ে শান্তি আলোচনা

থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার নেতারা সোমবার মালয়েশিয়ায় রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে মধ্যস্থতামূলক আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। রোববার রাতে থাই সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন গোলাবর্ষণের অভিযোগ তুললেও আলোচনা ঠিক দুপুর ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) শুরু হবে।

থাইল্যান্ডের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথম ওয়েচায়াচাই। মালয়েশিয়া, যেটি আসিয়ান (ASEAN) আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের সভাপতিত্ব করছে, থাই সরকারকে জানিয়েছে যে, কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতও আলোচনায় অংশ নেবেন।

গত মে মাসের শেষ দিকে একটি সীমান্ত সংঘর্ষে এক কাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দুই পক্ষই সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক চরমে পৌঁছায়, যা থাইল্যান্ডের ভঙ্গুর জোট সরকারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার থেকে আবারও সংঘর্ষ শুরু হলে তা চার দিনের মধ্যেই এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াইয়ে রূপ নেয়। এতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে; যার মধ্যে থাইল্যান্ডে ১৩ জন বেসামরিক এবং কাম্বোডিয়ায় ৮ জন। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ২ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার জানান, উভয় নেতা একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

শান্তির আহ্বান

ব্যাংকক ও ফনম পেন উভয়ই একে অপরকে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করছে।

কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রবিবার সকালে থাইল্যান্ড একাধিক সীমান্ত পয়েন্টে কামান হামলা ও স্থল অভিযানে অংশ নেয় এবং ঐতিহাসিক মন্দির এলাকায় ভারী গোলাবর্ষণ করে।

ফনম পেনের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী স্রেউং নিটা বলেন, “আমি মনে করি, যদি থাইল্যান্ড যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়, তাহলে উভয় দেশ শান্তিতে থাকতে পারবে।”

অন্যদিকে থাই সেনাবাহিনী জানায়, কাম্বোডিয়ান বাহিনী রবিবার সিভিলিয়ান এলাকায় গুলি চালায় এবং দীর্ঘপাল্লার রকেট মোতায়েন করে।

সিসাকেত প্রদেশে সাংবাদিকেরা সারাদিন ধরে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর্টিলারি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা থাভর্ন টুসাওয়ান বলেন, “আমেরিকা যদি যুদ্ধবিরতিতে জোর দেয়, তাহলে তা শান্তি বয়ে আনবে।”

দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর বহু বছর ধরেই বিরোধ চলছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তা মোয়ান থম এবং ১১ শতকের প্রেয়াহ ভিহেয়ার হিন্দু মন্দির। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির কাম্বোডিয়াকে দিলেও ২০০৮ সালে সেটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে আবারো উত্তেজনা বেড়ে যায়। কাম্বোডিয়া বর্তমানে আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানালেও থাইল্যান্ড তা প্রত্যাখ্যান করে দ্বিপাক্ষিক সমাধানে অটল রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *