জনগণের গলার কাঁটা এখন কসবা-আখাউড়া সড়ক

কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী আঞ্চলিক সড়কটি আজ জনগণের ভোগান্তি জনগনের গলার কাটা হয়ে দাড়িছে,বিশেষ করে কসবা উপজেলার অংশে প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে কসবা বাজার থেকে চাপিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা এতটাই নাজুক যে—সেখানে চলাচল এখন মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে করার শামিল। গর্ত আর খানাখন্দে ভরা এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে কয়েক হাজার মানুষ, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, চাকরিজীবী, রোগী, এবং সাধারণ যাত্রীরা রয়েছে।

এই সড়কটিতে সবচেয়ে বেশি চলাচল করে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। কিন্তু চলাচলের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

চাপিয়া এলাকার কলেজছাত্রী সীমা আক্তার বলেন, “প্রতিদিন কলেজে যেতে রাস্তায় পড়ে যেতে হয়। কোথায় গর্ত আর কোথায় রাস্তা—তা বোঝাই যায় না। অনেকবার কাদায় পড়ে বই-খাতা ভিজে গেছে। কতদিন এভাবে চলবো?”

অটোরিকশা চালক আব্দুল মান্নান বলেন, “সিএনজি চালাতে ভয় লাগে। গর্তে পড়ে যাত্রী পড়ে যায়, গাড়ি নষ্ট হয়। আমাদের আয় তো কমে যাচ্ছে। সরকার রাস্তার কাজ শুরু করলো না কেন বুঝি না।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, “রাস্তায় ধুলাবালি আর কাঁদা দুই সময়েই সমস্যা। গাড়ি কম চলে, তাই দোকানে বেচাবিক্রিও কম। তেল-গ্যাসের দাম বাড়ে, কিন্তু রাস্তা ঠিক হয় না।”

এই দুর্দশার অবসান ঘটাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের এলজিইডি (LGED) রুরাল কানেক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (RCIP) আওতায় কসবা-আখাউড়া সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুরো সড়কের মধ্যে কসবা অংশের ৭ কিলোমিটার এবং আখাউড়া অংশের ৪ কিলোমিটার উন্নয়নের জন্য মোট ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকার টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পায় কিশোরগঞ্জের মেসার্স মমিনুল হক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরুর কথা থাকলেও বাস্তবে এখনও পর্যন্ত কেবল একটি কালভার্ট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষাকালে এমন ধীরগতির কাজ আরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ এমএম ডেন্স কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে সড়কটির আংশিক সংস্কার হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ চার বছরেও কোনো পূর্ণ সংস্কার হয়নি।

এ বিষয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ছামিউল ইসলাম বলেন,
“আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কসবা-আখাউড়া আঞ্চলিক সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এলজিইডির আওতায় রুরাল কানেক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (RCIP) এর অধীনে রাস্তার উন্নয়নকাজের জন্য টেন্ডার কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিশোরগঞ্জের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে।

আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছি। তারা কালভার্ট ভাঙার কাজ শুরু করেছে এবং পূর্ণাঙ্গ কাজও দ্রুত শুরুর আশ্বাস দিয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজের গতি কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে, এটা সত্যি। তারপরও আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে নিয়মিত তদারকি করছি যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয় এবং জনগণের ভোগান্তি লাঘব হবে

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *