অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় ইউটিউবকেও যুক্ত করা হচ্ছে। শুরুতে এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হলেও পরে তা বাতিল করেছে সরকার।সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স এবং স্ন্যাপচ্যাটসহ জনপ্রিয় কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এই অ্যাপগুলোতে কিশোরদের অ্যাকাউন্ট তৈরি নিষিদ্ধ করা হবে।
ইউটিউবের ক্ষেত্রে কিশোররা ভিডিও দেখতে পারবে, তবে তারা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। এর ফলে কনটেন্ট আপলোড বা মন্তব্য করার মতো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না।
গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব দাবি করেছে, এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয় এবং এটি অস্ট্রেলীয় শিশুদের জন্য উপকারী হতে পারে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ই-সেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট গত মাসে ইউটিউবকেও নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন। কারণ ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইউটিউবই সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ছিল বলে জানান তিনি।
বুধবার (৩০ জুলাই) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ গণমাধ্যমকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের সন্তানদের জন্য সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। আমরা অস্ট্রেলীয় অভিভাবকদের জানাতে চাই, আমরা তাদের পাশে আছি।
তিনি আরও বলেন, এটি একমাত্র সমাধান না হলেও, এতে অবশ্যই পার্থক্য তৈরি হবে।
যুক্তরাজ্য এবং নরওয়েসহ আরও কয়েকটি দেশ এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। নরওয়ে ইতোমধ্যে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে, এবং যুক্তরাজ্য বলছে, তারাও বিষয়টি বিবেচনা করছে।
তবে ইউটিউবের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করবে।
গত সপ্তাহে কয়েকটি অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, ইউটিউব নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলে গুগল সরকারকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। গুগলের দাবি, এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল কমিউনিকেশনস মন্ত্রী অ্যানিকা ওয়েলস বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু ভূমিকা থাকলেও, শিশুদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হিংস্র অ্যালগরিদমের কোনো স্থান নেই।
তিনি বলেন, অনলাইনের ক্ষতির হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা যেন খোলা সমুদ্রের ঢেউ আর হাঙরের মধ্যে সন্তানকে সাঁতার শেখানোর মতো। আমরা হয়তো সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু হাঙরগুলোর উপর নজরদারি চালাতে পারি। এই লড়াই অস্ট্রেলীয় শিশুদের কল্যাণের জন্য এবং কোনো আইনি হুমকিতে আমরা পিছিয়ে যাব না।
নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে অনলাইন গেমিং, মেসেজিং, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অ্যাপস, কারণ সেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বয়সসীমা না মানলে সর্বোচ্চ ৫ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। তাদের বিদ্যমান অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে না দেয়ার পাশাপাশি যেকোনো ফাঁকফোকর রোধ করতে হবে।
এই নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কার্যকর হবে, তার বিস্তারিত বুধবার ফেডারেল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।