দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেহাল রাজধানীর মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কটি, ঢাকা ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি শেষে এখন খুঁড়ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ


বাপ্পি হাসান
(ভাটারা) ঢাকা জেলা প্রতিনিধি

দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেহাল রাজধানীর মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কটি। ঢাকা ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি শেষে এখন খুঁড়ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বৃষ্টিতে দ্বিগুণ দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থরা বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প’-এর আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় পানি সরবরাহে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কটির এক পাশ গভীর গর্ত করে পাইপ বসানো হয়। এর পরই শুরু হয় রাজউক ও মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ি। সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, নতুনবাজার থেকে বালু নদমুখী সড়কের ভাটারা থানার সামনে থেকে নূরেরচালার সংযোগ সড়ক পার হয়ে আরো অন্তত ২০০ ফুট পর্যন্ত খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

মাদানী এভিনিউ সড়কে খানাখন্দের কারণে তীব্র জনভোগান্তি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম। ভোগান্তি কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌গত শনিবার আমি, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা সড়কটি পরিদর্শনে গিয়েছি। সেখানে খানাখন্দের কারণে চলাফেরায় সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে। তবে বৃষ্টি শেষ না হলে কাজ শেষ করা যাবে না। আপাতত খানাখন্দগুলো ভরাট করে দুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা করব। এতে আরো এক মাসের মতো লাগবে। আর পুরো সড়কের কাজ শেষ হতে তিন মাস লাগতে পারে।’

সরজমিনে দেখা যায়, মাদানী এভিনিউ সড়কের দুই পাশেই খানাখন্দে ভরা। এক পাশে রাজউক, অন্য পাশে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সড়ক খুঁড়ছে। গতকাল দুপুরের পর ফরায়েজি হাসপাতালের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালে দেখা যায়, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তারা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা একের পর এক অজুহাতে সড়কটি ক্ষতবিক্ষত করে জনভোগান্তি বাড়িয়ে চলছে। সড়কটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বর্ষার আগে মিছিল করেছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘদিন সড়কটি বেহাল পড়ে থাকায় আশপাশের মার্কেটে কেনাবেচা কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, এমনও দিন যায় বেচাকেনা শূন্য থাকে।
মাদানী এভিনিউ সড়কের দুই পাশে বড় বড় তিন-চারটি হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজ। হাসপাতালগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেহাল সড়কের কারণে রোগীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক ডাক্তার তাদের চেম্বার অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি ওষুধ পরিবহনেও সমস্যা হচ্ছে।

বেহাল সড়কটি সব ধরনের মানুষকে ভোগাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। গতকাল স্থানীয় দোকানি, বাসিন্দা, রিকশাচালক, গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বললে তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আবুল কালাম মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‌সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কর্মকর্তারা সড়কটি সম্পর্কে উদাসীন। নগরীতে এমন ভোগান্তি প্রমাণ করে, এ সরকারের কাছে মানুষ ও তাদের দুর্ভোগের কোনো দাম নেই। প্রতিদিনই এখানে মানুষ আহত হয়, হাত ভাঙে, পা ভাঙে, অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকার নির্বিকার। এটা নগরবাসীর প্রতি সরকারের চরম অবহেলা।’
নগরবিদরা বলছেন, জনগণের জন্য উন্নয়ন করে সরকার। কিন্তু জনগণের ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে উন্নয়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভোগান্তি হয় সমন্বয় ও সদিচ্ছার অভাবে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *