ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তির দিন আজ

গণমঞ্চ ডেস্ক –

আজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’। গত বছরের এই দিন বিশ্বজুড়ে ‘৩৬ জুলাই’ নামেই বেশি পরিচিত। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের এ দিনে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তিলাভ করে।

দিনটি কেবল একজন স্বৈরশাসকের পতনের দিনই নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও জনগণের সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হাসিনার পতনের প্রথম বর্ষপূর্তির এ দিনটিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিপুল আয়োজনে দিনটি উদযাপন করছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। ঐতিহাসিক এ দিনে প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন। আজ তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কড়া কারফিউ উপেক্ষা করে গত বছরের ৫ আগস্ট পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা করে। দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নেমে আসে রাজপথে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি, টিয়ারশেলসহ সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন তারা। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ গণভবনে ঢুকে আনন্দ-উল্লাস করতে থাকে। শুধু গণভবনই নয়, শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর অসংখ্য উত্তেজিত জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদেও ঢুকে পড়ে। দেশের প্রতিটি শহর-উপশহর, পাড়া-মহল্লায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশু, বৃদ্ধ, শ্রমজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী—সবাই রাজপথে নেমে দেড় দশকের স্বৈরশাসকের পতন উদযাপন করে। এ সময় জনগণ তীব্র ক্ষোভ ও আক্রোশে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ শেখ পরিবারের বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সাড়ে ১৫ বছরের শোষণ ও নির্যাতনের একাধিক দুর্গেও আক্রমণ করে।

এদিকে হাসিনার পতনের পর আনন্দ-উল্লাসের মধ্যেও ঘটে নির্মম ঘটনা। গোটা রাজধানীবাসী যখন বিজয় মিছিলে মেতেছিল, ঠিক তখনই যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি স্থানে শেখ হাসিনার পালিত পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে।

হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খবরও প্রচারিত হয়। তিনি বেলা পৌনে ৪টার দিকে সেনাসদরে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, হাসিনা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার যাত্রা মূলত শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে। সেনা সমর্থিত সে নির্বাচনে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপর তিনি আর একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনও হতে দেননি। দেশে ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, বিচারহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দমন-পীড়ন এবং ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার সরকারের বিরুদ্ধে। গুম ও ক্রসফায়ারের নামে এক ভয়ের রাজ্য কায়েম করেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ এই সময়কালে দেশজুড়ে চলমান সংকট, ব্যর্থ অর্থনীতি, ভয়াবহ দুর্নীতি ও নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক সময় গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্য, ছাত্রদের দাবিকে উপেক্ষা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সহিংস দমন-পীড়ন আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। এরপর থেকে দিন যত গড়ায়, আন্দোলন ততই তীব্র ও বিস্তৃতি লাভ করে।

ছাত্রদের আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একই দিনে চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামসহ ৬ জন নিহত হন। এরপর ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। গতি পায় আন্দোলন। এতে সরাসরি সম্পৃক্ত হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজপথে

হাসিনা তার পুলিশ বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর হত্যাযজ্ঞের ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর হামলা, নির্যাতন, গুলি- সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। মায়েরা কাঁদলেন, বাবারা ক্ষোভে ফুঁসলেন, শিক্ষক-সাংবাদিক-শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। কিন্তু হাসিনার নিষ্ঠুরতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়, আটকে রাখা হয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও।

শেখ হাসিনা এ আন্দোলনকে দমন করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করেন। আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের মধ্যে ছয়জন- নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে জোর করে ভিডিও বার্তা দিতে বাধ্য করা হয়। বাকিরা তখন ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে মুক্তি পাওয়া সমন্বয়কারীরা ৩ আগস্ট এক দফা দাবি ঘোষণা করেন, আর তা ছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগ।

কারফিউ ব্যর্থ, জনতার দখলে গণভবন

৫ আগস্ট ভোরে ঢাকা ছিল থমথমে, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সরকারের তরফ থেকে দেশবাসীকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে কারফিউর কথা উল্লেখ করে রাজপথে নামার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। অভিভাবকদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল সন্তানদের সামলে রাখার। তবে, জনতা বাধা মানেননি। সকাল ১০টার পর ঢাকার প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরা, বসিলাসহ মিরপুর, বাড্ডা, চানখারপুল, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে শুরু করেন। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ গুলি করে বেশ কয়েকজনকে হত্যাও করে। দুপুরে সেনাবাহিনীর তথ্য অধিদপ্তর জানায়, সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তখনই জনমনে স্পষ্ট হয়, শাসনব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে।

এর মধ্যেই জনতা চারদিক থেকে গণভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন, গদি ধরে রাখা আর সম্ভব নয়। তিনি তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ছাড়েন। সরাসরি যান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। গণমাধ্যমের একাধিক সূত্র মতে, সেখান থেকেই তিনি দিল্লি পৌঁছান।

খবর চাউর হতেই ঢাকার রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। মিছিল, স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরী। গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে জনতা। কেউ নিচ্ছেন টিভি, কেউ হাঁস-মুরগি, কেউ রুই মাছ। কেউ নেমেছেন গণভবনের লেকে গোসল করতে। এক বিজয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গোটা দেশ।

সেদিন যা বলেছিলেন সেনাপ্রধান

হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বেলা আড়াইটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে, কিছুটা পিছিয়ে তিনি পৌনে ৪টায় বক্তব্য দেন। সেখানে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে কাজ করছি। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হচ্ছে এবং দেশের সব কার্যক্রম এখন থেকে এই সরকারের অধীনে চলবে।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং আগামী দিনের শাসন কাঠামো নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির ডাকে সেদিন বিকেলে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ প্রায় সব বড় দলের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। একই সঙ্গে সহিংসতা বন্ধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়। সেই বৈঠকে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া, শিক্ষার্থী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক মামলায় আটক সব বন্দিকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

৬ আগস্ট ২০২৪ সালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করে। ড. ইউনূস প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ৭ আগস্ট ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার চূড়ান্ত হয়। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।

রক্তাক্ত পথেই আসে বিজয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে বেশি হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। সেদিন সারা দেশে ৬ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে নিহতের মিছিল জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। প্রায় ২০ হাজার আহত হন। সরকারি আংশিক হিসাবে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৮৩৪ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের তথ্য মতে, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৪০০ জন। আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা (এসিএলইডি) থেকে তথ্য ব্যবহার করে বিবিসি বিশ্লেষণমূলক মৃত্যুর একটি তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৩৮৪ জন।

১৯৫২, ’৬৯, ’৯০-এর সঙ্গে যুক্ত হলো ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানও। তবে ’২৪-এর এই আন্দোলন মৃত্যু, প্রতিরোধ ও বিস্তারের দিক দিয়ে ছাপিয়ে গেছে আগের সব অভ্যুত্থানকে। অতীতের মতো এবারও সামনে ছিলেন শিক্ষার্থীরা, তবে এবার নেতৃত্ব দিয়েছে এক নতুন প্রজন্ম—‘জেনারেশন জি’। শুধু রাজপথ নয়, তাদের লড়াই হয়েছে অনলাইনেও—ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।

রাষ্ট্রপতির বাণী

দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে বলেন, বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী

আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে বলেন, এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, যাদের যূথবদ্ধ আন্দোলনের ফসল আমাদের এই ঐতিহাসিক অর্জন, তাদের সবাইকে আমি এই দিনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

ড. ইউনূস বলেন, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন

আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক সুধী সমাবেশে গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করবেন।

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস সরকার ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করছে। এ উপলক্ষে গত ১ জুলাই থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। যার সমাপ্তি হচ্ছে আজ। শেষ দিনে কেন্দ্রীয়ভাবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দিনভর আয়োজন থাকছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।

রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি

ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *