যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক রাজিন সালেহের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তালাকনামা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার আড়াই বছরের শিশু কন্যাকে স্ত্রীর কাছ থেকে জোর করে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

লিখিত বক্তব্যে সুমাইয়া আক্তার জানান, গত ৫ বছর আগে এনসিপি নেতা রাজিন সালেহের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আমার এবং আমার পরিবারের সঙ্গে অবজ্ঞাসূচক আচরণ করতে থাকেন এবং আমাকে প্রায়ই মারধর করে আমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিত। আমাদের সংসারে আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে বিধায় আমি আমার মেয়ের দিকে চেয়ে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আসছি।

গত দেড় বছর আগে আমার স্বামী রাজিন সালেহের পার্শ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলার দিঘীরপাড় আলিয়া মাদরাসায় কম্পিউটার অপারেটর পদে ১৩ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি নেন। চাকরির টাকার জন্য আমার ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দেয়। এর কয়েকদিন পরেই আমাকে নতুন করে নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে আমার স্বামী আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি বাধ্য হয়ে আমার বাবার বাড়ি চলে আসি।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সে এনসিপি নেতা হয়ে আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি গত ৩০ জুন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগের পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা সানী আহম্মেদ আমাকে ফোনে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয় এবং এ বিষয়ে মিমাংসা করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। এতে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ স্থগিত রাখার জন্য বলি। কিন্তু বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি তিনি। গত ৫ জুলাই আমার স্বামী আমার বাবার বাড়িতে তার এক ভাগিনাকে সঙ্গে নিয়ে আমার শিশু কন্যাকে নিয়ে যায়। বলেছিল বিকেলে দিয়ে যাবে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার মেয়েকে আর ফেরত দেয়নি।

আমি আবার গতকাল ৯ জুলাই পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে যাই এবং ইউএনও স্যারের কাছে সহায়তা চাই। আমার ছোট বাচ্চাকেও আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা করা হয়েছে। আমি ইউএনও স্যারকে বলেছি যথাযথ তদন্তপূর্বক আমাকে আমার স্বামীসহ সংসারে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য। তখন ইউএনও স্যার আমার স্বামীকে ফোন দিলে তিনি বলেন বাচ্চা কে আমার কাছে দেবে না। ইউএনও স্যার আমাকে বলেন, এ বিষয়ে কোর্টে দারস্থ হওয়ার জন্য। এছাড়া আরও জানতে পারি গত ২৭ জুন আমার স্বামী আমাকে আদালতের  মাধ্যমে তালাক দিয়েছে। অথচ আমি এ বিষয়ে অবগত নই।

অভিযুক্ত স্বামী পাকুন্দিয়া উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ বলেন, আমি গত ২৭ তারিখ তাকে তালাক দিয়েছি আইন ও বিধি অনুযায়ী। তার যে কাবিনের টাকা তা আমি ডাকের মাধ্যমে জমা দিয়েছি। সে ডাকের চিঠি প্রত্যাখান করছে। মূলত একটি মহল আমাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *